পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
সিলেটের প্রাকৃতিক দৃশ্য, ঐতিহাসিক স্থান, ধর্মীয় গুরুত্বসম্পন্ন স্থান এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। চলুন জেনে নেয় সিলেট জেলার উল্লেখযোগ্য ১১টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। এগুলো হলো– হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার, হযরত শাহ পরান (রহ.)-এর মাজার, শাহী ঈদগাহ, মণিপুরি রাজবাড়ি, ওসমানী জাদুঘর, মিউজিয়াম অব রাজাস, বঙ্গবীর ওসমানী শিশু উদ্যান, জাফলং, রাতারগুল, বিছানাকান্দি এবং তামাবিল।
হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার
শাহ জালালের দরগাহ, সিলেট শহরের একটি আধ্যাত্মিক স্থাপনা, যা মূলত ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে আগত পাশ্চাত্যের ইসলাম ধর্মপ্রচারক শাহ জালালের বাসস্থান ও শেষ সমাধি। এই দরগাহ সিলেট শহরের উত্তর প্রান্তে একটি টিলার উপর অবস্থিত। কারো কারো মতে সিলেট ভূমির মুসলিম সভ্যতা ও ধর্মমত এই দরগাহকে কেন্দ্র করে প্রসার লাভ করেছে। শাহ জালালের লৌকিক ও অলৌকিক স্মৃতি বিজড়িত এই স্থান সিলেটের অন্যতম পূণ্য তীর্থ হিসেবে পরিচিত।
শাহজালালের সমাধিকে দরগাহ টিলা বলে অভিহিত করা হয়। টিলার উত্তর প্রান্তে প্রাচীর বেষ্টিত স্থানে শাহজালালের সমাধি অবস্থিত। চার কোণে চারটি উঁচু স্তম্ভ দ্বারা তা নির্মিত। দরবেশের সমাধির পশ্চিম প্রান্তে প্রাচীর সীমা ঘেঁষে একটি ছোট মসজিদ রয়েছে। যা সিলেটের তদানীন্তন মাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর উইলস দ্বারা পুনঃনির্মিত হয়। দরবেশের সমাধির পূর্ব পশ্চিমে যথাক্রমে ইয়েমেনের যুবরাজ শেখ আলী ও ভারতের গৌড় রাজ্যের উজির মকবুল খানের কবর রয়েছে।
শাহজালালের দরগাহর দক্ষিণ দিকে প্রবেশ পথে বাহির হতে পাশে ছিল্লাখানা ও দরবেশের সহাধ্যায়ী হাজি ইউছুফ, হাজী খলিল ও হাজী দরিয়া নামক এই তিন জন অলির সমাধি বিদ্যমান। তাদের পাশে দরগাহের ভূতপূর্ব মোতওয়াল্লী আবু তুরাবের কবর। এখান থেকে পশ্চিমের প্রবেশ পথে বাহির হতে আরেকটি বেষ্টনীর পাশে দরগাহের আরো দুই জন মোতওয়াল্লী আবু নাসির ও আবু নসর পাশাপাশি অন্তিম শয্যায় শায়িত আছেন। এর দক্ষিণে একটি উচুঁ স্থানে গম্বুজ বিশিষ্ট ঘড়ি ঘর নামে এক দালান দেখতে পাওয়া যায়। এই ঘড়ি ঘরের পূর্ব দিকে প্রকাণ্ড গম্বুজ ওয়ালা বৃহৎ অট্টালিকা, যা এই অঞ্চলে সুদৃঢ় অট্টালিকা বলে খ্যাত। এটি সাধারণত গম্বুজ বলে অভিহিত। এই গম্বুজটি সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে তার বিশ্বস্ত কর্মী ফরহাদ খান দ্বারা নির্মিত।
গম্বুজের দক্ষিণে দরগাহ মসজিদ নামে খ্যাত মুসলমানদের একটি বৃহৎ উপসানাগার রয়েছে। বাংলার সুলতান আবু মুজাফফর ইউসুফ শাহের সময় কালে ( ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দে ) মন্ত্রী মজলিশে আতার কর্তৃক দরগাহ চত্বরে নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীতে বাহারাম খান ফৌজদারের সময়ে (১৭৪৪ খ্রিঃ) পূর্ণনির্মিত হয়। সিলেট শহরের মুসলমানদের উপাসনাগার হিসেবে এই মসজিদই সর্ববৃহৎ। উক্ত মসজিদের সম্মুখে উত্তর দক্ষিণ হয়ে লম্বালম্বি প্রকাণ্ড প্রাঙ্গণ রয়েছে। টিলার উপর পাথরের গাঁথুনী দিয়ে অতি সুদৃঢ়ভাবে প্রাঙ্গণটি প্রস্তত করা হয়েছে। টিলা হতে নিচে অবতরণের জন্য উক্ত প্রাঙ্গণের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সিঁড়ি আছে। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলে দরগাহ টিলা ঘেঁষে একচালা একটি ঘর পাওয়া যায়। এই ঘর নারী দর্শনার্থীদের উপাসনার জন্য নির্মিত। এর উত্তরে মুসল্লীদের অজুর জন্য (নতুন ভাবে প্রস্তত) টাব সিস্টেমে পানির ব্যবস্থা রয়েছে।
এখান থেকে অল্প পরিসর উত্তরে একটি বড় পুকুরে গজার জাতীয় মাছ সাঁতার কেটে বেড়ায় এবং খাবার দেখিয়ে ডাক দিলে কুলে এসে ভিড় জমায়। দরগাহ পুকুরের গজার মাছ সম্পর্কে প্রচলিত লোককাহিনী অনুসারে, শাহজালাল এগুলোকে পুষেছিলেন। যে কারণে জিয়ারতকারীসহ সিলেটের আধিবাসীরা আজও প্রথাগতভাবে গজার মাছের প্রতি স্নেহ দেখিয়ে আসছেন। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে অজ্ঞাত লোকেরা বিষ প্রয়োগে পুকুরের প্রায় ৭শ’রও বেশি গজার মাছ হত্যা করে। ফলে পুকুরটি গজার মাছ শুন্য হয়ে পড়ে। পরে হযরত শাহজালালের এর অপর সফরসঙ্গী মৌলভীবাজারের শাহ মোস্তফার মাজারের পুকুর থেকে ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে ২৪টি গজার মাছ এনে পুকুরে ছাড়া হয়।
দরগাহ পুকুরের ঠিক উত্তর পাশে ও দরগাহ টিলার পূর্বে একটি বড় আঙ্গিনা রয়েছে। উক্ত আঙ্গিনার উত্তর-পূর্বে একটি বৃহৎ লঙ্গরখানা ছিল। অনেক কাল পূর্বে ইহা পর্যটক, বিদেশাগত দর্শক ও গরীব দুঃখিদের আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হতো। যা বর্তমানে পরিবেশজনিত কারণে বন্ধ আছে। লঙ্গরখানার পূর্বদিকে অন্য একটি ঘরে তামার নির্মিত দুটি বড় বড় ডেগচী রয়েছে। যার একেকটিতে সাতটি গরু ও সাত মন চাউল এক সাথে পাক করা যায়। উক্ত ডেগচীর কিনারায় ফার্সি ভাষা লিখিত, জাহাঙ্গীর নগর (ঢাকার পুরনো নাম) নিবাসী ইয়ার মোহাম্মদের পুত্র শায়খ আবু সাঈদ ইহা (ডেগচী) তৈরি করিয়ে মুরাদ বখস কর্তৃক দরগাহে পাঠানো হলো। সন তারিখঃ- রমজান ১১০৬ হিঃ (১৬৯৫ খ্রিঃ)। দরগাহের আঙ্গিনার পূর্ব সীমায় ও ডেগচী ঘরের অল্প পরিসর দহ্মিণে উত্তর দক্ষিণে লম্বালম্বি একটি প্রশস্ত দেওয়াল এর মধ্যস্থলে দরগাহের প্রধান প্রবেশ পথ। যা দরগাহ গেইট হিসেবে খ্যাত। দরগাহ গেইটের দক্ষিণ দিকে ছাত্রাবাসসহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে।
দরগাহ টিলার পশ্চিমে অল্প দুরে হযরত শাহজালালের অলৌকিক উৎস বা ঝরণা অবস্থিত। ঝরণাকে কেন্দ্র করে দরবেশের নানা অলৌকিক কীর্তি কিংবদন্তি রূপে এখনও প্রচলিত আছে। সিলেটের লোক বিশ্বাস মতে, ঝরণায় প্রবাহিত পানি জমজমের পানির সদৃশ, রোগীরা এই পানি পান করে আরোগ্য লাভ করে। অনেক কাল পূর্বে দরগাহ টিলায় শাহজালাল এর বাসস্থান ও উপাসনা গৃহের উত্তর পূর্ব দিকে একটি পুকুর ছিল। সিলেটের সর্বসাধারণ হিন্দু ও মুসলিম সকলেই এর জল ব্যবহার করত। শাহজালাল অজু গোসল সম্পর্কিত পানি ব্যবহারে পবিত্রতা বিষয়ে চিন্তিত হয়ে দরগাহ টিলার পশ্চিমে একটি কুপ খনন আদেশ দেন। কুপ তৈরি হওয়ার পর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন আল্লাহ যেন এই কুপটিকে জমজমের পানির সাথে সম্পর্ক যুক্ত করেন। এরপর তিনি নিজ হাতের লাঠি দিয়ে কুপের মাটিতে ইসলামী বাক্য (বিসমিল্লাহ) পড়ে আঘাত করলে সাথে সাথে কুপের মধ্যে পানি প্রবাহিত হতে লাগলো এবং সোনা ও রুপার রঙ্গের মাছের জন্ম হল। যা আজও এই কুপের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। এরপর উক্ত কুপের চার পাশে দেওয়াল করে কুপের উত্তর পাশে দুটি পাথর বসিয়ে দেয়ার পর পাথরের মধ্য হতে অনবরত পানি বইতে থাকে। পূর্বকালে যে পানি লোকে বিশ্বাস ও ভক্তি করে পান করতো। আজকাল ঐ ঝরনার পানি বোতলে করে বিক্রি হয়।
শাহজালালের সমাধিতে সোনার কৈ, মাগুর ইত্যাদি দরগাহের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও শাহজালালের ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। যার মধ্যে দরবেশের ব্যবহৃত তলোয়ার, কাঠের তৈরি খড়ম, হরিণের চামড়া দ্বারা নির্মিত নামাজের মোসল্লা, তামার নির্মিত প্লেট এবং বাটি। উল্লেখ্য যে, তামার নির্মিত বাটি বা পেয়ালায় আরবিতে কিছু কালাম লিখিত আছে। রোগমুক্তির উছিলা হিসেবে ঐ বাটিতে পানি ঢেলে পান করলে আরোগ্য লাভ হয় বলে লোকের বিশ্বাস রয়েছে।
বাংলাদেশসহ বিদেশেও শাহজালালের নামে অগণিত প্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মক্তব, মসজিদ, হোস্টেল, শহর, দোকান ও বাজার ইত্যাদির নামকরণ করা হয়েছে। এভাবেই তার ভক্তরা ভক্তি ও শ্রদ্ধা ভরে শাহজালালের সিলেট আগমনকে উপলক্ষ করে তার স্মৃতিকে যুগের পর যুগ স্মরণে ধারণ করে আসছেন। তার স্মরণে লিখা হয়েছে অগণিত পুথিপুস্তক, গজল, কবিতা ও গান।
হযরত শাহ পরান (রহ.)-এর মাজার
হযরত শাহ পরান (রহ.) সুহরাওয়ার্দিয়া ও জালালিয়া তরিকার প্রখ্যাত সুফি ছিলেন। জানা যায়, তিনি হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর ভাগ্নে এবং তার জন্ম ইয়েমেনে। তার নামানুসারেই এই মাজারের নামকরণ করা হয়। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৭ কি.মি. দূরে দক্ষিণগাছ পরগনায় খাদিম নগরে খানকাহ স্থাপন করে তিনি আধ্যাত্মিক সাধনা শুরু করেন। প্রতি বছর আরবি রবিউল আউয়াল মাসের ৪, ৫ ও ৬ তারিখে তাঁর ওরস হয়। তাঁর মাজারটি উঁচু টিলার উপরে ইট দিয়ে বাঁধানো ও দেয়াল ঘেরা। মাজারের উত্তর দিকে ‘আশাগাছ’ নামে একটি প্রাচীন গাছ রয়েছে। মাজারের পাশেই রয়েছে একটি প্রাচীন মসজিদ।
শাহী ঈদগাহ
বাংলাদেশের কয়েকটি প্রাচীন দর্শনীয় ঈদগাহের মধ্যে সিলেটের শাহী ঈদগাহ অন্যতম। দৃষ্টিনন্দন, কারুকার্যময় এ ঈদগাহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। পুরাতন কোর্ট ভবনের অদূরে একটি ছোটো টিলার ওপর এর অবস্থান। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে ঐ অঞ্চলের ফৌজদার ফরহাদ খাঁ এটি নির্মাণ করেছিলেন। অনুপম কারুকার্যখচিত এই ঈদগাহটি ১৫টি গম্বুজ সজ্জিত। সীমানা প্রাচীরের চারদিকে রয়েছে ছোটো-বড়ো ১০টি গেট। ঈদগাহের সামনে অজুর জন্য বিশাল পুকুর রয়েছে।
এই শাহী ঈদগাহ ময়দানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মওলানা মোহাম্মদ আলী, মওলানা শওকত আলী, মহাত্মা গান্ধী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকে বক্তৃতা দিয়েছেন। ১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দে এখানে সৈয়দ মোহাম্মদ হাদী ও সৈয়দ মোহাম্মদ মেহেদী ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বে ইংরেজ বিরোধী অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। ইংরেজদের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় শহিদ হন। ঈদগাহের উত্তরে শাহী ঈদগাহ মসজিদ ছাড়াও বন কর্মকর্তার বাংলো, দক্ষিণে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিলেট কেন্দ্র, পূর্বদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিস বর্তমান। এখানে প্রতিবছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাতে এক সাথে প্রায় দেড় লাখ মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মণিপুরি রাজবাড়ি
মণিপুরী রাজবাড়ি সিলেটের অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান, যা সিলেট সদরের অন্তর্গত মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় অবস্থিত। এটি সিলেটের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ১৮২২-২৪ খ্রিস্টাব্দে সিলেট মহানগরীর মধ্যস্থলের মির্জাজাঙ্গাল রোডে এই ঐতিহাসিক বাড়িটি নির্মাণ করেন তৎকালীন মণিপুরী রাজ্যের তিন সহোদর রাজা চৌর্জিৎ সিং, মার্জিত সিং ও গম্ভীর সিং রাজবাড়িটি তৈরী করে এখানে বসবাস করেন।
পরে চৌর্জিৎ সিং ও মার্জিত সিং কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ এলাকায় বসতি স্থাপন করলেও রাজা গম্ভীর সিং থেকে যান মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীতে। ১৮২৬ সালে বৃটিশ সরকারের সহযোগিতায় বার্মার সাথে যুদ্ধ করে মনিপুর রাজ্য পুরুদ্ধারের পূর্ব পর্যন্ত রাজা গম্ভীর সিং সপরিবারে এখানেই অবস্থান করেন। ১৮২২ সালে মণিপুরী রাজ্যের সাথে বার্মার যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। অসংখ্য মণিপুরী পরিবার নিজ আবাসভূমি ছেড়ে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়।
তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজা চৌর্জিৎ সিংও কাছাড়ে পালিয়ে যান। রাজ্যভার গ্রহণ করেন তার সহোদর মার্জিত সিং। এক পর্যায়ে মার্জিত সিংও বার্মিজদের কাছে পরাজিত হন। পরিশেষে চৌর্জিৎ, মার্জিত ও গম্ভীর – তিন ভাই একত্রে পুনরায় চলে আসেন মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীতে। তৎকালীন বৃটিশ উপনিবেশ শাসকদের আশ্রয়ে এখানেই তারা বসতি স্থাপন করেন। বৃটিশ সরকারের অনুরোধে সিলেটে সশস্ত্র খাসিয়াদের দমনে মণিপুরী সৈন্যবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন সিলেটে অবস্থান করার কারণে মণিপুরীদের সাংস্কৃতিক সম্ভারের নানা দিক এ অঞ্চলে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
মির্জাজাঙ্গালের এই রাজবাড়িটি সংস্কারের জন্য অদ্যাবধি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। রাজা কর্তৃক নির্মিত প্রাসাদের তিন চতুর্থাংশেরই এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে মণিপুরী ঠাকুর ও ব্রাহ্মণ পরিবারের লোকজন বংশ পরস্পরায় বসবাস করছেন রাজবাড়িতে। পূর্বসুরী রাজার রেখে যাওয়া নানা বস্তুকে স্বর্ণালী স্মৃতি হিসেবে ধারণ করে আছে পরিবারগুলো। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে একমণ ওজনের মন্দিরের একটি ঘণ্টা যার গায়ে মনিপুরী ভাষায় লেখা আছে, ‘‘শ্রীহট্ট কুনোঙ্গী শ্রী মহাপ্রভুদা শ্রীলশ্রী পঞ্চযুক্ত মণিপুরে স্বরচন্দ কীর্ত্তি সিংহ মহারাজন্য কৎখিবী সরিকনি ইতিশকাব্দা ১৮০০ তারিখ ১৮ জৈষ্ঠ্য’’। এখানে রাসোৎসব ও ঝুলনযাত্রার জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে অসংখ্য ভক্ত সমাবেশ ঘটে। রাজবাড়ির সুপ্রাচীন প্রধান ফটক, সীমানা প্রাচীর, মনোহর কারুকাজের সিঁড়ি ও বালাখানার ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়।
ওসমানী জাদুঘর
মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম.এ.জি. ওসমানীর স্মৃতিরক্ষার্থে তার বাসভবনে গড়ে তোলা হয়েছে এই জাদুঘর। ১৯৮৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়। জাদুঘরের তিনটি গ্যালারিতে জেনারেল ওসমানীর ব্যবহৃত কাপড়চোপড়, আসবাবপত্র, পেইন্টিং, আলোকচিত্র ও বইপত্রসহ সকল স্মৃতিচিহ্ন ও দ্রব্যাদি যথাযথভাবে সংরক্ষিত রয়েছে।
মিউজিয়াম অব রাজাস
সিলেটের প্রখ্যাত মরমি কবি হাসন রাজা (জন্ম ১৮৫৪ খ্রি.) ও পরিবারের অন্য সদস্যদের স্মৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারে এই জাদুঘরটি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে দেওয়ান হাসন রাজা ও দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধুরীর মূল্যবান ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও গানের পাণ্ডুলিপি রয়েছে। জাদুঘরের সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ এক ইঞ্চি x পৌনে এক ইঞ্চি আকারের পবিত্র কোরানশরিফের ক্ষুদ্র সংস্করণ। এছাড়াও অন্যান্য জিনিসপত্রের মধ্যে এখানে হাসন রাজার ঘোড়ার বেল্ট এবং পোষা কুড়া পাখি ও হাতির নামের তালিকা, তার ব্যবহৃত শ্বেত পাথর ও রুপার তৈরি তৈজসপত্র, তার স্ত্রীর ব্যবহার্য জিনিসপত্র ইত্যাদি রয়েছে। এই মরমি কবি ৭ই ডিসেম্বর ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
বঙ্গবীর ওসমানী শিশু উদ্যান
সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র ধোপা দিঘির পাড়ে এই শিশু পার্কটি অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম.এ.জি. ওসমানীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী ২০০০ সালে এটি স্থাপিত হয়। প্রায় ৮ একর আয়তনের এই পার্ক স্থাপনে ব্যয় হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। নানা ধরনের গেমস ছাড়াও এখানে শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন রাইড যেমন- ঘোড়া, ট্রেন, নৌকা, চরকি ইত্যাদি রয়েছে। আরো রয়েছে ডাইনোসর, তুষার চিতা, বুনো বানর ও ছোটো-বড়ো অজগর সাপের প্রতিকৃতি।
জাফলং
সিলেট নগরী থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় জাফলং-এর অবস্থান। প্রকৃতিকন্যা হিসেবে সারাদেশে পরিচিত সিলেটের জাফলং। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সীমান্তের ওপারে ডাউকি পাহাড় থেকে নেমে আসা পিয়াইন নদীর প্রবাহে সৃষ্ট ঝরনাধারা জাফলংকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ এক লীলাভূমিতে পরিণত করেছে। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। একই সাথে ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উঁচু পাহাড়, গহিন অরণ্য ও নিস্তব্ধ নিরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে।
এসব দৃশ্যপট দেখতে প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এখানে একটি রেস্তোরাঁ এবং আবাসন সুবিধাদি নির্মাণ করেছে। জাফলং-এর শীত ও বর্ষা মৌসুমের রূপ ভিন্ন। বর্ষায় ধূলিধূসরিত পরিবেশ হয়ে উঠে স্বচ্ছ। খাসিয়া পাহাড়ের সবুজাভ চূড়ায় তুলার মতো মেঘরাজির বিচরণ এবং যখন-তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করে।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, হাজার বছর ধরে জাফলং ছিল খাসিয়া জৈন্তা-রাজার অধীন নির্জন বনভূমি। ১৯৫৪ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর খাসিয়া জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটে। অনেক আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে নৌপথে জাফলং আসতে শুরু করেন। আশির দশকে সিলেটের সাথে জাফলং-এর ৫৫ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে জাফলং-এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেমীরাও জাফলংয়ে ভিড় করতে থাকেন। জাফলং এখন দেশের অন্যতম সেরা পর্যটন স্পট।
রাতারগুল
সিলেটের সুন্দরবন হিসেবে পরিচিত রাতারগুল দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলাভূমির বন। নদী ও হাওরবেষ্টিত প্রায় ৫০৫ একর আয়তনের এলাকাটির অবস্থান গোয়াইনঘাট থানার ফতেহপুর ইউনিয়নের রাতারগুল গ্রামে। এই বনে তিন ধরনের গাছই বেশি- হিজল, করচ, বরণ আর পাটি বেত। এ সকল গাছের পাশাপাশি ইকরা, খাগড়া, মূর্তা, বেত ও শনজাতীয় বন রাতারগুলকে অনন্য জলার বনে পরিণত করেছে। ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সাথে ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরিসৃপ, ১৭৫ প্রজাতির পাখি ও ৯ প্রজাতির উভচর প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে এই বনে।
বিছানাকান্দি
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় বাংলাদেশ সীমানা সংলগ্ন বিছানাকান্দি একটি সৌন্দর্যমন্ডিত প্রাকৃতিক পর্যটন স্থান। সীমান্তের ওপারে উৎপন্ন পাহাড়ি ঝরণার পানি ও গোয়াইন নদীর সঙ্গমস্থলটি বিছানাকান্দি নামে পরিচিত। এখানকার স্বচ্ছ পানিতে ছড়ানো বিভিন্ন বর্ণের নুড়ি-পাথরের উপস্থিতি যে কাউকে মুগ্ধ করবে। এস্থানের জলপ্রবাহ ও দিগন্ত-বিস্তৃত সবুজ পাহাড়ি সৌন্দর্য সহজেই একজন পর্যটকের যাত্রার ক্লান্তিকে দূর করতে পারে। পর্যটকদের জন্য এখানে নৌভ্রমণের সুযোগ রয়েছে।
তামাবিল
তামাবিল হচ্ছে সিলেট অঞ্চলের সীমান্তবর্তী একটি এলাকা, যা জাফলং যাবার ৪ কিলোমিটার আগে অবস্থিত। এখান থেকে ভারতের পাহাড়, ঝর্ণা ছাড়াও অনেক দর্শনীয় স্থান অবলোকন করা যায়। তামাবিলের সবচেয়ে কাছের নদীটির নাম তাইরঙ্গল।
তামাবিল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখান থেকে সরাসরি ভারতের পাহাড়, পর্বত, ঝর্ণা, জলপ্রপাত দেখা যায়। সীমান্তের ওপারে অনেকগুলো জলপ্রপাত রয়েছে। এই জলপ্রপাতগুলো বিকেল বেলা ও গোধূলির সময় দেখতে চমৎকার লাগে। নয়নাভিরাম এসব দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভিড় জমায় তামাবিল সীমান্তে। কয়লা ও সাদা পাথরসহ অন্যান্য পাথর এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা হয় যা সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থলপথ এর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় ,এটি বাংলাদেশের শেষ বাড়ি, যা বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে অবস্থিত, এবং জৈন্তা হিল রিসোর্টের জন্য বিখ্যাত। তামাবিলের চতুর্দিক ঘিরে রয়েছে সবুজ পাহাড়। মেঘালয়ের পাহাড় থেকে উৎপন্ন ঝরণার স্রোতে ভেসে আসা নুড়ি পাথর আর পাহাড়ি গাছপালা শোভিত তামাবিলের সৌন্দর্য পর্যটকদের সারা বছর আকর্ষণ করে।
এছাড়াও দেখতে পারেন আলী আমজাদের ঘড়ি, হরিপুর গ্যাস ক্ষেত্র, জৈন্তা রাজবাড়ি, চৈতন্যদেবের মন্দির, ক্বীন ব্রিজ, নাজিমগড় রিসোর্ট, পর্যটন মোটেল, ড্রিমল্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, সিলেট অ্যাডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড, পান্তুমাই ঝরনা, ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি, রাজা গৌর গোবিন্দের দুর্গ, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা, লাক্কাতুরা চা বাগান, পুরোনো আদালত, চাঁদনী ঘাট, জিতু মিয়ার বাড়ি, গাজীর মোকাম ও কৈলাশের মোকাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এম. সি. কলেজ (মুরারি চাঁদ কলেজ), বিয়ানীবাজার পাল রাজবাড়ি, বল্লাঘাট, মালনীছড়া চা বাগান, লালাখাল, কানাইঘাট-মুলাগুল পাথর কোয়ারি, পিয়াইন নদী, সুরমা নদী, মণিপুরি নৃত্যকলা, বেত শিল্প, সিলেট নাগরী লিপি, খাসিয়াদের জীবন ও সংস্কৃতি এবং রাস উৎসব।
ভ্রমণের প্রস্তুতি:
পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও ছোট কিছু ভুল আপনার আনন্দময় ভ্রমণকে বিব্রতকর করে তুলতে পারে। তাই ভ্রমণকে আরো উপভোগ্য এবং স্মরণীয় করে তুলতে কিছু প্রস্তুতি অবশ্যই প্রয়োজন। ভ্রমণের প্রস্তুতির জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে পারেন।
লিস্ট তৈরি করা
ভ্রমণের সময় আপনি কী কী করবেন এই পরিকল্পনাগুলো লিখে ফেলুন। এতে করে আপনার ভ্রমণের সময় যথাযথ ব্যবহার করা যাবে। লিস্ট অনুযায়ী ঠিক করুন কোথায় কোথায় যাবেন এবং সেখানে কত সময় অতিবাহিত করবেন।
হালকা লাগেজ
লাগেজ যতটা সম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন। তাহলে আপনি খুব সহজেই ব্যাগ বহন করতে পারবেন। অন্যথায় ভারী ব্যাগ আপনার ভ্রমণকে তিক্ত করে তুলতে পারে।
সঠিকভাবে প্যাকিং
স্যান্ডেল বা জুতা পলিথিন বা কাগজে মুড়িয়ে ব্যাগে নিন এতে কাপড় ও অন্যান্য জিনিস পত্র নোংরা হবে না। এ জাতীয় ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
স্থানীয় খাবার
ভ্রমণে যতটুকু সম্ভব স্থানীয় খাবার খাবেন এবং সেই খাবারের স্বাদ বুঝতে চেষ্টা করবেন। আপনি যদি ঘুরতে গিয়ে নিয়মিত রেস্টুরেন্টে খাবার খান তাহলে আপনার ঘুরতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই ট্যুরিস্ট রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে স্থানীয় লোকজন যেখানে খায় সেখানে খাবার চেষ্টা করুন।
অফ-সিজন ভ্রমণ
ভ্রমণ মৌসুমের বাইরে ভ্রমণ করলে খরচ কমে আসবে। অফ সিজনে সাধারণত পর্যটক কম থাকে। তাই হোটেল থেকে শুরু করে পরিবহন ও খাবার প্রায় সব জায়গাতেই আপনি কম খরচে চলতে পারবেন। তাই অফ সিজনে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন।
যাতায়াতের ব্যবস্থা
ভ্রমণের স্থানের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন। কারণ এসব ভ্রমণে আমাদের সবচেয়ে বেশি ঠকতে হয় স্থানীয় যানবাহন ভাড়া নিয়ে। ভাড়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে গাড়িচালকরা আপনার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চাইবেন।
অতিরিক্ত টাকা
ভ্রমণে সবসময় আপনার বাজেটের বাইরে কিছু টাকা সাথে রাখুন। যেকোনো সময় যেকোনো বিপদে এই অতিরিক্ত টাকা আপনাকে হেল্প করবে। আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেবিট ক্রেডিট কারডের মাধ্যমে কিছু অতিরিক্ত টাকা সাথে রাখতে পারেন।
ছোট ব্যাগ
ভ্রমণে মোবাইল, মানিব্যাগ ও ছোট ছোট দরকারি জিনিসপত্র রাখার জন্য ছোট একটি ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। কিছু ব্যাগ পাওয়া যায় যেটি কোমরে রাখা যায়।
চার্জার
মোবাইল ও ল্যাপটপের চার্জার নিতে ভুলবেন না। পাওয়ার ব্যাংক হলে সবচেয়ে ভালো হয়। রুমের বাইরে যাবার সময় পাওয়ার ব্যাংকটি সঙ্গে নিতে পারেন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে মোবাইলের চার্জ অনেক বেশি খরচ হয়। তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা নিরাপদ।
ইয়ারফোন
ভ্রমণের সময় কাটানোর জন্য ইয়ারফোন বা এমপিথ্রি প্লেয়ার সঙ্গে নিতে পারেন। ছোট মাপের কোনো স্পিকার সঙ্গে নিতে পারেন। এতে করে গ্রুপের সবাই একসঙ্গে গান শুনতে পারবেন এবং একটি ভালো আড্ডা জমে উঠবে।
ঢাকা থেকে সিলেট যাবেন যেভাবে:
রাজধানী ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন এবং বিমানে সিলেট যাওয়া যায়। সড়কপথে ঢাকা থেকে সিলেট এর দূরত্ব ২৪৩ কিলোমিটার ও রেলপথে সিলেটের দূরত্ব ২৩৫ কিলোমিটার।
বাস
রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী, আব্দুল্লাহপুর, ফকিরাপুল ও আরামবাগ থেকে ঢাকা টু সিলেট রুটে বিভিন্ন পরিবহন এর এসি, নন-এসি বাস নিয়মিত চলাচল করে। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট যেতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে সিলেটগামী এসি, নন-এসি বাসের মধ্যে রয়েছে এনা, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, গ্রীন লাইন, শ্যামলী পরিবহন, লন্ডন এক্সপ্রেসসহ আরো কিছু পরিবহন সার্ভিস।
ট্রেন
ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে চাইলে কমলাপুর অথবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা, কালনী এক্সপ্রেস ও উপবন এক্সপ্রেস এ যাত্রা করতে পারেন। ট্রেনের টিকিট কাটতে এখানে ক্লিক করুন।
বিমান
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভো এয়ার ও ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। বিমানে করে সিলেট পৌছাতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টা। বিমান বাংলাদেশের টিকিট কাটতে এখানে ক্লিক করুন।
যেখানে থাকবেন:
গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেল এন্ড রিসোর্টস
ঠিকানা: জল্লারপাড়, সিলেট
মোবাইল: ০১৭১৩-৫৫৮৮৬৬
ওয়েবসাইট: grandpalacebd.com
হোটেল গার্ডেন ইন
ঠিকানা: গার্ডেন টাওয়ার, সিলেট
মোবাইল: ০১৭১১-২৭১১৮৫
ওয়েবসাইট: hotelgardeninn.net
হোটেল নির্ভানা ইন
ঠিকানা: মির্জাজাঙ্গাল, সিলেট
মোবাইল: ০১৯৭১-৩৩৬৭৬১
ওয়েবসাইট: nirvanainn.com
হোটেল মেট্রো ইন্টান্যাশনাল
ঠিকানা: পূর্ব জিন্দাবাজার,সিলেট
মোবাইল: ০১৯২৪-৭৭৭৩৩৩
ওয়েবসাইট: hotelmetrobd.com
হোটেল স্টার প্যাসিফিক
ঠিকানা: দরগা গেইট, সিলেট
মোবাইল: ০১৭৭৭-৭৯৯৪৬৬
ওয়েবসাইট: hotelstarpacific.com
হোটেল নুরজাহান গ্রান্ড (আবাসিক)
ঠিকানা: দরগা গেইট, সিলেট
মোবাইল: ০১৯৩০-১১১৬৬৬
ওয়েবসাইট: noorjahangrand.com
হোটেল মিরা গার্ডেন
ঠিকানা: মিরা টাওয়ার, মিরাবাজার, সিলেট
মোবাইল: ০১৭৩০-৮৮৩৪২৫
ওয়েবসাইট: hotelmiragarden.com.bd
হোটেল ফরচুন গার্ডেন
ঠিকানা: নাইওরপুল, সিলেট
মোবাইল: ০১৭০৫-৪৪৪১১১
ওয়েবসাইট: hotelfortunegardenbd.com
হোটেল হলি গেইট (আবাসিক)
ঠিকানা: দরগা গেইট, সিলেট
মোবাইল: ০১৯৭২-৫৫২২৩৩
ওয়েবসাইট: hotelholygate.com
হোটেল নুরজাহান গ্রান্ড (আবাসিক)
ঠিকানা: দরগা গেইট, সিলেট
মোবাইল: ০১৯৩০-১১১৬৬৬
ওয়েবসাইট: noorjahangrand.com
কি খাবেন
বাংলাদেশের একেক অঞ্চলে আছে বিশেষ বিশেষ খাবার, যে খাবারগুলোর সঙ্গে এক হয়ে গেছে সেই অঞ্চলের নাম। বৃহত্তর সিলেটেও ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবার আছে। এসব খাবার ভীষণ জনপ্রিয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- সাতকরা গোশত (গরু বা খাসির মাংস রান্না করা হয় টকস্বাদযুক্ত সাতকরার সঙ্গে); শুটকি ভর্তা ও তরকারি; পান্তা ভাতের সাথে শুঁটকি, আলু, বেগুন, ডাল বা সরিষার ভর্তা; চুঁইঝাল গোশত; পায়েশ ও ক্ষীর; হান্দেশ (এক ধরনের মিষ্টি, যা গুড় দিয়ে তৈরি হয়); খিলপিঁঠা ও চুঙ্গা পিঠা (বাঁশের মধ্যে চালের গুঁড়া, নারকেল ও গুড় দিয়ে বানানো হয় চুঙ্গা পিঠা), বিন্নি চালের ভাত ও হাঁসের মাংস; চা (ফাইভ লেয়ার চা, দুধ চা, লেবু চা)। – সিলেটের মালনীছড়া চা বাগান ও অন্যান্য চা বাগানের জন্য বিখ্যাত, বিশেষ করে ফাইভ লেয়ার চা (পাঁচ স্তরের চা) অনেক জনপ্রিয়।
সতর্কতা:
ইট-পাথরের শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণের জন্য আকুল থাকে মন। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরো আনন্দময়। ভ্রমণে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে—
পরিকল্পিত ভ্রমণ
পরিকল্পিতভাবে ভ্রমণ করলে যাত্রা আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়। যদি বাস বা ট্রেনের টিকিট বুকিং করার সুযোগ থাকে, তাহলে মাঝামাঝি আসন নিন। রাতের বেলায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে জানালার পাশে বা বাসের খুব পেছনের আসন এড়িয়ে চলাই ভালো
নির্ভরযোগ্য যানবাহন ব্যবহার
নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য বাস বা যানবাহন বেছে নিন। সরকারি বা স্বীকৃত পরিবহন সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করুন। বাস বা গাড়ির রুট ও সময়সূচি সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পরিষেবা (যেমন উবার, পাঠাও) ব্যবহার করলে গাড়ির তথ্য যাচাই করুন।
ভিড় এড়িয়ে চলুন
খুব বেশি ভিড় থাকলে বা সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখলে সেই যানবাহনে না ওঠাই ভালো। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র যেমন মানিব্যাগ, ফোন বা ব্যাগ নিজের কাছেই রাখুন।
জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করুন
স্থানীয় পুলিশ, বাস সার্ভিস হেল্পলাইন ও পরিচিতজনের নম্বর সহজেই পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখুন। বিপদের সময় ৯৯৯ (বাংলাদেশের জরুরি সেবা) তে কল করুন।
যাত্রাপথে অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কিছু খাবেন না
যাত্রাকালে অনেক যাত্রী পার্শ্ববর্তী যাত্রীকে ভদ্রতার খাতিরে বা বন্ধুসুলভভাবে খাদ্য-পানীয় গ্রহণে অনুরোধ করেন। এ ধরণের পরিস্থিতিতে ঝুঁকি এড়াতে অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া কিছু না খাওয়া নিরাপদ।
মোবাইল ফোন নিরাপদে রাখুন
অনেকেই বাসে বা গণপরিবহনে যাত্রাকালে মোবাইল ফোন বের করে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং করেন। এ ধরনের অভ্যাস ছিনতাইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে জানালার পাশে বসলে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন বের না করে নিরাপদ। সম্ভব হলে, যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফোন বের না করে, নিরাপদে পকেটে বা ব্যাগে রাখুন।